Monday, July 28, 2025

ফেসবুক লাইভে উমামা ফাতেমা: জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা তাঁর জীবনের একটি ‘ট্র্যাজিক’ ঘটনা হিসেবে এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতাকে বর্ণনা করেছেন। গত রোববার রাতে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিটের একটি লাইভে তিনি এই আন্দোলনে যোগদান থেকে শুরু করে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা ও তথ্য তুলে ধরেন।

উমামা ফাতেমা বলেন, “জুলাই একটা বড় ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু আমি যখন মুখপাত্র হই, তখন প্রথম আবিষ্কার করি যে এই প্ল্যাটফর্মের নামে নানা কাজ হচ্ছে। আমার মাথায় আসেনি যে এটাকে দিয়ে টাকা-পয়সা ইনকাম করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাকে মানি মেকিং মেশিনে পরিণত করা হয়েছে, এবং এটা খুবই নিয়মিতভাবে হয়েছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৫ আগস্টের পরদিন থেকেই ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় দখল ও চাঁদাবাজি শুরু হয়। “আমি অবাক হয়ে যাই, গতকাল পর্যন্ত সমন্বয়ক পরিচয় দিতে চায়নি, আর আজ থেকে শুনি সবাই এই পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে। মনে হচ্ছিল, এখন কি রক্ষীবাহিনীর মতো সমন্বয়কবাহিনী তৈরি হচ্ছে?” তিনি বলেন, তিনি চেয়েছিলেন প্ল্যাটফর্মটিকে আরও বিকেন্দ্রীভূত ও সুষ্ঠু করতে, কিন্তু এই প্রস্তাবের কারণে অনেকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন উমামা। অভ্যুত্থানের পর তিনি সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। গত বছরের অক্টোবরে তাঁকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে তিনি বলেন, “সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোডে বসে হতো, আর আমি পুরো প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করতাম। চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি, আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগগুলো আমি ভালোভাবে জানতাম। চট্টগ্রামের ঘটনা সমাধান করতে গেলে অনেকের পর্দা উঠে যেত।” ৩১ ডিসেম্বরের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ কর্মসূচি হঠাৎ ঘোষণা ও বাতিল হওয়ায় তিনি বিরক্ত ছিলেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি তিনি জানতে পারেন, কেউ কেউ দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেমেছেন, যাতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে প্ল্যাটফর্ম পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও পরে তাঁর বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ ওঠে। “এই প্ল্যাটফর্ম আমার কাছে মূল্যবান মনে হয়নি। কিন্তু কারও কারও কাছে এটা মূল্যবান ছিল, কারণ এটা দিয়ে ডিসি-এসপি কার্যালয়ে দৌড়ানো যেত,” তিনি বলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে উমামা বলেন, “ন্যূনতম আত্মসম্মান থাকলে কেউ এই প্ল্যাটফর্মে টিকতে পারবে না। এটা আমার জীবনের একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ছিল। জুলাইয়ে যারা আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিল, তারা যখন সস্তা কাজ করে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি আরও বলেন, তাঁকে “টিস্যু পেপারের মতো” ব্যবহার করা হয়েছে।
লাইভের শেষে তিনি বলেন, “মুখপাত্র হওয়ার আগে আমার ধারণা ছিল না যে এই পরিচয়ে টেন্ডার বাণিজ্য, তদবির, নিয়োগের কাজ হচ্ছে। আমি কখনো এসবের জন্য এই পরিচয় ব্যবহার করিনি। আমি একটি সচ্ছল পরিবার থেকে এসেছি, আমার এসবের প্রয়োজন হয়নি। আমার পরিবার আমাকে মানি মেকিং মেশিন হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে দেখে এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখে।”

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.