তালেবান সদস্যরা কাবুল দখলের তৃতীয় বার্ষিকী উদযাপন করেন। বাগরাম বিমানঘাঁটি, আফগানিস্তান, ১৪ আগস্ট ২০২৪।
৩৩ হাজারের বেশি আফগান নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার পর একজন সরকারি কর্মকর্তার ভুলে তাঁরা তালেবানের প্রতিশোধের ঝুঁকিতে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য গোপনে হাজার হাজার আফগানকে দেশটিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। এ তথ্য উঠে এসেছে আদালতের নথিতে। ২০২৪ সালের মে মাসে লন্ডন হাইকোর্টের এক বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে মঙ্গলবার এই নথি প্রকাশিত হয়।
নথিতে বলা হয়, প্রায় ২০ হাজার আফগানকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যার জন্য কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হতে পারে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি পার্লামেন্টে জানান, ‘আফগান রেসপন্স রুট’ কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ জন যুক্তরাজ্যে এসেছেন বা আসার পথে আছেন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ২০২২ সালে ভুলবশত প্রায় ১৯ হাজার আফগান ও তাঁদের পরিবারের তথ্য ফাঁস হয়, যাঁরা যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ২০২৩ সালের আগস্টে ফেসবুকে তথ্যের একাংশ প্রকাশিত হলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর সেপ্টেম্বরে তৎকালীন কনজারভেটিভ সরকার আদালতের নিষেধাজ্ঞা পায়। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ‘সুপারইনজাংশন’ জারি করে, যাতে বলা হয়, তথ্য ফাঁস হলে তালেবানের হাতে এসব ব্যক্তি বেআইনি হত্যাকাণ্ড বা গুরুতর সহিংসতার শিকার হতে পারেন। সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় গোপন পুনর্বাসন কর্মসূচির তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ব্রিটিশ সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে যাঁরা এই বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁদের তথ্য ফাঁস হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়, মে ২০২৪ পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি আফগানকে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মধ্য-বামপন্থী সরকার ঘটনাটি পর্যালোচনা করে। নথিতে বলা হয়, আফগানিস্তান এখনো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তালেবানের সংগঠিত প্রতিশোধ অভিযানের নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিলি বলেন, ‘আফগান রেসপন্স রুট’ বন্ধ করা হয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “এই তথ্য ফাঁস কখনোই ঘটার কথা ছিল না।” এছাড়া, অন্যান্য পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে আরও প্রায় ৩৬ হাজার আফগানকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’র অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য আফগানিস্তানে প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছিল।