Sunday, July 13, 2025

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর


আসন্ন জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত রাখতে পুলিশ সদর দপ্তর দেশব্যাপী সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।

গত সপ্তাহ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সম্ভাব্য প্রত্যেক প্রার্থীর ১১টি প্রধান বিষয়ে—যেমন অপরাধমূলক কার্যক্রম, পুলিশ রেকর্ড ও সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা—সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রতিটি আসনে নিরাপত্তার চাহিদা মূল্যায়ন করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিতে অসামঞ্জস্য থাকলে’ এই উদ্যোগের অপব্যবহার হতে পারে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নির্বাচনে নিরাপত্তার কৌশল নির্ধারণের জন্য আমরা এই তথ্য সংগ্রহ করছি। এর মাধ্যমে আমরা বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় এলাকা এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রার্থী বা সমর্থকদের চিহ্নিত করতে পারব।” এই উদ্যোগকে অত্যন্ত জরুরি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর লক্ষ্য হলো সহিংসতা বা অনিয়ম হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা।” *দ্য ডেইলি স্টার*-এর হাতে থাকা একটি চিঠির অনুলিপি অনুযায়ী, পুলিশ সদর দপ্তর সব থানাকে টেবিল ফরমেটে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এতে প্রার্থীর দলীয় পরিচয়, রাজনৈতিক অবস্থান, অপরাধ ও পুলিশ রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য পরিচিতি সম্পর্কে তথ্য নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, প্রার্থীদের পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাই করে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, এই কার্যক্রম নির্বাচনের দিন পর্যন্ত চলবে এবং শুধু প্রার্থী নয়, তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দলীয় কর্মীদের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি থানার স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এই তথ্য সংকলন করে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হবে, যেমন—কোথায় অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন, মোবাইল টহল বাড়ানো বা পুলিশ ও র‌্যাবের উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রয়োজন। প্রার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা প্রয়োজন হলে সেটিও এই তথ্যের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। ঢাকা জেলার একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি গোপন সেল গঠন করা হয়েছে। পাঁচ দিন আগে আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা পেয়েছি এবং নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য যাচাই করছি।” *দ্য ডেইলি স্টার*-এর সঙ্গে আলাপকালে অন্তত ছয়জন ওসি এই কার্যক্রমের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে, পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি, বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত গোপনীয় ও স্পর্শকাতর’ হিসেবে উল্লেখ করে। শনিবার পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইনস এবং ট্রাফিক ও ড্রাইভিং স্কুল পরিদর্শনের পর পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানান, পুলিশ এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা তৈরি করছে, বিশেষ করে ঢাকায়। তিনি বলেন, “সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা উন্নত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।” *দ্য ডেইলি স্টার*-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটা যদি নিয়মিত কাজের অংশ হয়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে, সেটা উদ্বেগের কারণ।” এই কার্যক্রম নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে, কারণ এটি কার্যত প্রার্থীদের ওপর নজরদারি। অপব্যবহার রোধে অত্যন্ত সতর্কতা প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “প্রার্থীদের তথ্য শুধু নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা উচিত। কোনো প্রার্থী ভুল করলে আইনি ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয় ছাড়া তথ্য সংগ্রহ করলে, এটি অপব্যবহারের হাতিয়ার হতে পারে।” **পুলিশের নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ** আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ সদর দপ্তর সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই প্রশিক্ষণ নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ। তিনি বলেন, “নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে, আমরা নয়। তবে, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে চাই।” পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর বলেন, “প্রথমে ঢাকার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য জেলায় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.