Sunday, July 20, 2025

কুয়েট সংকটের সমাধান হয়নি ৫ মাসেও, শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

খুলনা, ২০ জুলাই, ২০২৫ – খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনার পাঁচ মাস পার হলেও অচলাবস্থা কাটেনি। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তিনতলায় গিয়ে দেখা যায়, ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অবস্থান করছেন। তবে শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না। শনিবার ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ নামে একটি ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, “সকল নেতিবাচকতা ঝেড়ে ফেলে আমরা সবাই আগামীকাল ক্লাসে ফিরি। শিক্ষকরা আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন, তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না।” এই আহ্বান সত্ত্বেও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি অচলাবস্থার গভীরতা তুলে ধরেছে। ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজানুর রহমান বলেন, “আমরা এই অচলাবস্থার অবসান চাই। সর্বশেষ সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যা এখনো বলবৎ আছে। আমরা হতাশ, দ্রুত ক্লাস শুরু হোক। শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই, আমাদের সম্পর্ক ভালো এবং নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ক্লাস শুরু না হওয়া পর্যন্ত আমাদের হতাশা কাটছে না।” আরেক শিক্ষার্থী আশির মুনতাকিম বলেন, “আন্দোলনের সময় কিছু শিক্ষক মনোক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, আমরা তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে ৫ মাস হারিয়ে গেছে। সিন্ডিকেটে ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের ক্লাস নিতে কোনো আইনি বাধা নেই। তারা কেন ক্লাসে আসছেন না, তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা বলছি, আমরা ক্লাসে আসছি, আপনারা ক্লাস শুরু করুন।” কুয়েট গার্ডিয়ান ফোরামের ব্যানারে অভিভাবকরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন। তারা তাদের সন্তানদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে শিক্ষকদের দ্রুত ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান। ১৯ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “২০২০ সালে ভর্তি হয়ে দেড় বছরের সেশনজট পোহাতে হয়েছে। আবারও একই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাঁচ মাস পার হয়ে গেল, এখনো ক্লাসে ফিরতে পারিনি। এটি শিক্ষার্থী ও পরিবারের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।” কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, “উপাচার্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। একজন শিক্ষক ক্লাস নিলে বিশৃঙ্খলা হলে কে সামলাবে? শৃঙ্খলার জন্য একজন অভিভাবক প্রয়োজন।” শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, “আমরা ওপর মহলে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই নতুন উপাচার্য নিয়োগ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট সমাধান সম্ভব নয়। নতুন উপাচার্য এলে দ্রুত ক্লাস চালু হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণায় সহায়তা করছি।” গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য অপসারিত হন। ১ মে অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করা হলেও শিক্ষকদের বিরোধিতায় ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন। ১০ জুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও প্রক্রিয়া অগ্রসর হয়নি। ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানকে আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.