
অন্তর্বর্তী সরকার উপসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মকর্তাদের বহুল প্রতীক্ষিত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই পদোন্নতিগুলো বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সম্প্রতি বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের নথিপত্র, শৃঙ্খলা, দুর্নীতি, নৈতিকতা এবং পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করেছে। এসএসবি ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে এবং আরও এক বা দুটি বৈঠকের পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রায় ৭০০ জন পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শুরু করেছে এসএসবি। কয়েকটি বৈঠকের পর তালিকা চূড়ান্ত হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে এবং পরের মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ঘোষণা আসতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা পদোন্নতিতে নতুন গতি আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, গত ৮ জুলাই সর্বশেষ এসএসবির বৈঠক হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসে উপসচিব এবং পরবর্তী মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। এখন শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা। ২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগদানকারী ৩০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ৩ জুন থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে নানা কারণে পদোন্নতি বিলম্বিত হয়। ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তথ্য আহ্বান করে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কারণে প্রক্রিয়াটি আরও বিলম্বিত হয়। প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৭ জনসহ মোট ৩১৯ জন এবং ডিএস পুলে আবেদনকারী ২২৩ জন কর্মকর্তার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৫০ থেকে ২৮০ জনকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা বিবেচনায় রয়েছেন। তারা ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও ২০২১ সালে পদোন্নতি পান। ২০২৩ সালে তারা অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ্যতা অর্জন করেন। এবার তাদের পদোন্নতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ জনসহ মোট ৩০০ জনের বেশি কর্মকর্তা এই পদে বিবেচনায় আছেন। তবে শেখ হাসিনার আমলে ডিসি হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ৪৩ জন কর্মকর্তাকে তালিকায় রাখা হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদের বিপরীতে ৩৭০ জন এবং যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদের বিপরীতে ১,০৩৪ জন কর্মরত আছেন। উপসচিবের ১,৪২০টি পদের বিপরীতে ১,৪০২ জন কর্মরত। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করতে হবে। পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে ৫ বছর এবং মোট ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। ৩০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ৩ জুন এই যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে প্রায় তিন বছর পরও তাদের পদোন্নতি বাকি রয়েছে।