Sunday, July 13, 2025

৪-জাতি জোট: ভারত ‘ব্যর্থ’, চীন পারবে কি?


২০১৫ সালের ১৫ জুন, ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) নিয়ে একটি উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করিডোর গঠনের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে মোটর ভেহিকলস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) সই হয়। এর লক্ষ্য ছিল এই দেশগুলোর মধ্যে যান চলাচল বাড়ানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করা।

দশ বছর পর, ২০২৫ সালের ১৯ জুন, চীনের কুনমিং শহরে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই অঞ্চলে একটি নতুন 'চার-জাতি জোট' বা 'কোয়াড' গঠনের সম্ভাবনার কথা বলছেন।

৮ জুলাই পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, যার শিরোনাম সাউথ এশিয়ান কোয়াড?, বলা হয়, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান মে ও জুন মাসে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ত্রিদেশীয় স্ট্র্যাটিজিক ডায়ালগ ফোরাম এক দশক আগে গঠিত হলেও সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি আবার গতি পেয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এই জোটকে আলোচনায় এনেছে। জুন মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকের পর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ত্রিদেশীয় জোট 'চার-জাতি জোট' হতে পারে।

কেউ কেউ মনে করেন, এই জোটের উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে 'একঘরে' করা।

ভারতের ‘ব্যর্থতা’

২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে সার্কের ১৮তম সম্মেলনে ভারত সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বাড়াতে যান চলাচলের চুক্তি প্রস্তাব করে। পাকিস্তানের আপত্তির কারণে ভারত বিবিআইএন উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়, যাতে সঙ্গী হয় বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান। ২০১৫ সালের ১৫ জুন এই চার দেশ এমভিএ সই করে, যার লক্ষ্য ছিল সীমান্ত পারাপারের জটিলতা কমানো এবং মানুষ ও পণ্যের অবাধ চলাচল।

কিন্তু গত দশ বছরে এই উদ্যোগে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল ২০১৫ সালে এমভিএ অনুমোদন করলেও ভুটান গত বছরই এতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের ৫-৬ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভুটানের প্রতিনিধি দল এই আগ্রহ জানায়, উল্লেখ করে যে পরিবেশ ও অবকাঠামোগত কারণে তারা আগে যোগ দিতে পারেনি। এই বৈঠকে জোটের অগ্রগতি ও পণ্যবাহী গাড়ির চলাচলের খসড়া প্রটোকল নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে ২০২২ সালের ৭-৮ মার্চ নয়াদিল্লিতে বৈঠক হয়েছিল। দুই বৈঠকের মধ্যে দুই বছরের ব্যবধান এই জোটের ধীরগতি প্রকাশ করে।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জানা যায়, ভারত বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়েছে, যার ৫৫৮ মিলিয়ন ডলার সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নে ব্যয় হবে। এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ৬০% বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়, এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। গত এক বছরে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

দশ বছর পর ভারতের নেতৃত্বাধীন বিবিআইএন জোট যেন স্থবির, এবং অবাধ ভ্রমণের স্বপ্ন দূরবর্তী।

চীন পারবে কি?

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতা বদলে গেছে। ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক শীতল হওয়ায় ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে, এবং বেইজিং এতে সহায়তা করছে। ডন’র নিবন্ধে বলা হয়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এখন ছোট জোট গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে। ২০১৬ সালে ভারতের ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন বর্জনের ফলে সার্কের ‘অকার্যকারিতা’ পাকিস্তানকে বিকল্প জোটের দিকে ঠেলেছে।

চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান জোট কিছু সাফল্য দেখিয়েছে, যেমন পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান রেলপথ নির্মাণে চীনের প্রতিশ্রুতি এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস। এই সাফল্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশকে জোটে যুক্ত করতে উৎসাহিত করেছে। ইসলামাবাদ চায় বেইজিং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব কমাতে সহায়তা করুক।

ভারত চীনকে সার্কের অংশীদার করার পাকিস্তানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ইসলামাবাদ সার্কের অকার্যকারিতার সুযোগ নিয়ে চীনের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের স্বপ্ন দেখছে। তবে ভারত এই সম্ভাব্য জোটকে হুমকি হিসেবে দেখছে। ৯ জুলাই ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনীল চৌহান বলেন, চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ জোট ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে—ভারত যেখানে বিবিআইএন গঠনে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে, চীন কি সেখানে সফল হবে? ভারতের চ্যালেঞ্জ থেকে বেইজি কতটা শিক্ষা নেবে?


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.