Sunday, July 20, 2025

পাঁচ দশক আগে নীল আর্মস্ট্রং কি সত্যিই চাঁদে গিয়েছিলেন?

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই অ্যাপোলো ১১ মিশন চঁদে অবতরণ করে, যা মানব ইতিহাসের এক মাইলফলক। কিন্তু এর কয়েক বছর পর থেকে এই ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুরু হয়। মানুষ সত্যিই চাঁদে গিয়েছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বারবার প্রমাণ দিয়েছেন যে চাঁদে অবতরণ সত্য। তবু অনেকে এখনো সন্দেহ পোষণ করেন। আজ, ২০ জুলাই ২০২৫, মানুষের প্রথম চাঁদে পা রাখার ৫৬তম বার্ষিকী। এই প্রতিবেদনে আমরা ফিরে দেখছি এই অভিযানের পটভূমি, সম্পাদন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং সত্যতা।

১৯৬১ সালের ২৫ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কংগ্রেসে বলেন, “এই দশক শেষ হওয়ার আগে একজন মানুষকে চাঁদে নামিয়ে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য।” তখন স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ প্রতিযোগিতায় সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। কেনেডির এই আহ্বান মার্কিনিদের মধ্যে উৎসাহ জাগায়। আট বছর পর, ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে প্রথম পা রেখে বলেন, “একজন মানুষের জন্য ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য বিশাল অগ্রযাত্রা।” শতকোটি মানুষ টেলিভিশনে এই দৃশ্য দেখেন। আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গী ছিলেন বাজ অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স। **প্রস্তুতি ও দুর্ঘটনা** কেনেডির বক্তব্যের পর নাসা পাঁচ বছর ধরে চাঁদে অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের দল প্রথম মানবহীন অ্যাপোলো মিশন পরীক্ষা করে। কিন্তু ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে একটি পরীক্ষার সময় মহাকাশযানে আগুন লেগে তিন নভোচারী নিহত হন। এই দুর্ঘটনার পরও নাসা কাজ চালিয়ে যায়। ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে অ্যাপোলো ৭ প্রথম মনুষ্যবাহী মিশন হিসেবে সফল হয়। ডিসেম্বরে অ্যাপোলো ৮ চাঁদের অন্ধকার পাশ প্রদক্ষিণ করে ফেরে। ১৯৬৯ সালের মার্চে অ্যাপোলো ৯ পৃথিবীর কক্ষপথে লুনার মডিউল পরীক্ষা করে, এবং মে মাসে অ্যাপোলো ১০ চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে চূড়ান্ত মিশনের মহড়া দেয়। **ঐতিহাসিক যাত্রা** ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অ্যাপোলো ১১ যাত্রা শুরু করে। নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স ছিলেন এই মিশনে। ৭৬ ঘণ্টায় ২ লাখ ৪০ হাজার মাইল পথ পেরিয়ে ১৯ জুলাই তারা চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। ২০ জুলাই বেলা ১টা ৪৬ মিনিটে আর্মস্ট্রং ও অলড্রিনের লুনার মডিউল ‘ইগল’ মূল কমান্ড মডিউল থেকে আলাদা হয়। বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে ‘ইগল’ চাঁদের ‘সি অব ট্র্যাঙ্কুইলিটি’তে অবতরণ করে। আর্মস্ট্রং বলেন, “ইগল নেমেছে।” রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে আর্মস্ট্রং মডিউলের দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নামেন। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তিনি চাঁদে প্রথম পা রাখেন, এবং ১১টা ১১ মিনিটে অলড্রিন তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। তারা ছবি তুলে, মার্কিন পতাকা স্থাপন করে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালায় এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে কথা বলেন। ২১ জুলাই রাত ১টা ১১ মিনিটে তারা মডিউলে ফিরে ঘুমান। বেলা ১টা ৫৪ মিনিটে ‘ইগল’ কমান্ড মডিউলে ফেরে। তারা একটি ফলক রেখে আসেন, যেখানে লেখা, “জুলাই ১৯৬৯। সমস্ত মানবজাতির শান্তির বার্তা নিয়ে আমরা এসেছি।” ২২ জুলাই অ্যাপোলো ১১ পৃথিবীর পথে রওনা দেয় এবং ২৪ জুলাই প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করে। **ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও পাল্টা যুক্তি** কয়েক বছর পর কেউ কেউ দাবি করেন, চাঁদে অবতরণ মিথ্যা। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতদের হারাতে এটি সাজিয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে এই তত্ত্ব ছড়ায়। প্রধান দাবি ও তাদের খণ্ডন: - **“পতাকা কেন উড়ছিল?”** ছবিতে পতাকা উড়ছে বলে মনে হয়, কিন্তু চাঁদে বাতাস নেই। জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিক ফিয়েনবার্গ বলেন, পতাকা বাঁকা রডে টানটান করা ছিল। রড পুরোপুরি খোলা না হওয়ায় ঢেউয়ের মতো ভাঁজ দেখা যায়। - **“আকাশে তারা কেন নেই?”** ছবিতে তারা দেখা যায়নি কারণ ক্যামেরার এক্সপোজার কম রাখা হয়েছিল, যা উজ্জ্বল চাঁদের পৃষ্ঠ ধরতে প্রয়োজন ছিল। ফলে কম আলোর তারা ধরা পড়েনি। - **“স্টুডিও আলো ব্যবহার?”** ছায়ায় বস্তু দেখা যাওয়ায় কেউ বলেন, এটি হলিউডের আলো। ফিয়েনবার্গ বলেন, চাঁদের মাটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে ছায়ায় আলো পৌঁছায়। - **“আর্মস্ট্রংয়ের ক্যামেরা কই?”** আর্মস্ট্রংয়ের প্রতিচ্ছবিতে ক্যামেরা দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলেন, ক্যামেরা তাঁর স্পেসস্যুটের বুকে লাগানো ছিল। - **“পায়ের ছাপ মিলছে না?”** কেউ বলেন, জাদুঘরের জুতার সঙ্গে চাঁদের ছাপ মিলেনি। বিবিসি জানায়, ছাপ অলড্রিনের ‘লুনার ওভারশু’র, যা চাঁদে ফেলে আসা হয়েছিল। পরবর্তী মিশনগুলো অ্যাপোলো ১১-এর অবতরণের ছবি তুলেছে, যা নাসা প্রকাশ করেছে। ফিয়েনবার্গ মনে করেন, এই তত্ত্বে বিশ্বাস রাজনৈতিক, বিজ্ঞানের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। *তথ্যসূত্র: বিবিসি, হিস্ট্রি ডটকম*

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.