Saturday, July 26, 2025

যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ায় নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে

যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘাত কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং নিহত ও আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কম্বোডিয়া স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, এবং থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের মধ্যস্থতা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে, সংঘাত অব্যাহত রয়েছে, যা এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার ভোরে সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় মোট ৩৩ জন নিহত এবং ১৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নিহত ও আহতদের মধ্যে সামরিক এবং বেসামরিক উভয়ই রয়েছেন। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, তাদের ১৩ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮ জন বেসামরিক এবং ৫ জন সেনাবাহিনীর সদস্য। এছাড়া, থাই সেনাবাহিনীর গুলি ও গোলার আঘাতে কমপক্ষে ৭১ জন কম্বোডীয় আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ২০ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৪ জন বেসামরিক এবং ৬ জন সেনাবাহিনীর সদস্য। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রায় শতবর্ষ ধরে চলমান সীমান্ত দ্বন্দ্বের জেরে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ বোমারু বিমান, গোলাবারুদ, যুদ্ধজাহাজ এবং ট্যাংক নিয়ে তীব্র সংঘাতে জড়িয়েছে। সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে পান্না ত্রিভুজ নামে পরিচিত একটি ভূখণ্ড, যেখানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাসমৃদ্ধ এই অঞ্চলকে উভয় দেশই নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। এই সংকটের সূত্রপাত গত শতকের শুরুতে, যখন কম্বোডিয়া ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। ১৯০৭ সালে ফ্রান্স একটি মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে পান্না ত্রিভুজকে কম্বোডীয় ভূখণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। থাইল্যান্ড তখনই এর প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর কম্বোডিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও মানচিত্র অপরিবর্তিত থাকে, ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। দীর্ঘ কয়েক দশকের সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের মে মাসে থাই সীমান্তের কাছে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ায় উত্তেজনা পুনরায় উসকে ওঠে। গত সপ্তাহে বুধবার কম্বোডিয়ার সীমান্তের কাছে একটি ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে এক থাই সেনা গুরুতর আহত হন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার দুটি সেনা স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। জবাবে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী থাইল্যান্ডের বান নাম ইয়েন প্রদেশে রকেট হামলা চালায়, এবং তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার ইব্রাহিম থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াকে সংঘাত এড়িয়ে সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে বিরোধ নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। উভয় দেশ তার এই আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানালেও সংঘাত থামছে না।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.