Sunday, July 20, 2025

কক্সবাজারে বিএনপির বিক্ষোভ: কট্টরপন্থী দল ক্ষমতায় গেলে তালেবান রাষ্ট্র হবে বলে লুৎফর রহমানের হুঁশিয়ারি

আজ রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, একজন বিএনপি নেতার হত্যা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একজন নেতার বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে কটূক্তির প্রতিবাদে এই সমাবেশ ডাকা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “বিএনপি জনগণের দল, জনগণের কথা বলে। বিএনপি হেরে গেলে বাংলাদেশও হেরে যাবে। কট্টরপন্থী কোনো দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তালেবানের মতো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।” এই সমাবেশ গত শনিবার এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে কটূক্তি, কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপি নেতার হত্যা এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ডাকা হয়। বিকেল চারটার আগেই কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন থেকে অন্তত ২৫ হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। মিছিলে এনসিপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ভোট পদ্ধতির সমালোচনা করে লুৎফর রহমান বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না। ভোটাররা ভোট দেবেন ঠিকই, কিন্তু কাকে ভোট দিচ্ছেন, প্রার্থী কে জানতে পারবেন না। ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে, গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হবে।” তিনি জনসমর্থনহীন দলগুলোকে “অকৃতকার্য ছাত্র”দের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “যে দলের জনসমর্থন নেই, তারা নির্বাচনে জেতার ভয়ে পিআর পদ্ধতি চায়। তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন বানচালের চক্রান্তে লিপ্ত।” এনসিপির কটূক্তি প্রসঙ্গে লুৎফর রহমান বলেন, “১৯ জুলাই পাবলিক হল ময়দানে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। কিন্তু এনসিপির পদযাত্রার কথা বলায় আমরা মাঠ ছেড়ে দিই। অথচ ওই সমাবেশ থেকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করতে দ্বিধা করেননি। আমরা তাঁর ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কক্সবাজারে এনসিপির কোনো কর্মসূচিতে গন্ডগোল হলে বিএনপি দায় নেবে না।” নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছিলেন, “আগে আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জে গডফাদার শামীম ওসমান ছিলেন; এখন শুনছি কক্সবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন।” এই বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। শনিবার সন্ধ্যা ও রাতে শহরের ঘুমগাছতলার পুরোনো শহীদ মিনার ও প্রধান সড়কে এবং চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া ও টেকনাফে বিক্ষোভ মিছিল হয়। গত ১৩ জুলাই ভারুয়াখালীর পানিছড়ার বটতলী বাজারে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রহিম সিকদারকে হত্যা করা হয়। সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মাবুদ এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তাঁকে হত্যা করে। লুৎফর রহমান বলেন, এই হত্যার মূল কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিএনপিকে ধ্বংস করা। তিনি উল্লেখ করেন, নোমান একসময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে কাজ করতেন। আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে জনগণের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে লুৎফর রহমান বলেন, কক্সবাজার-৩ আসনের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লা-ওয়ার্ডে শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটি গঠন করে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বিএনপি নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেন। কক্সবাজার পৌর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল হুদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুবেদার মেজর (অব.) আবদুল মাবুদ, শহর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কাশেম, শহর যুবদলের আহ্বায়ক আজিজুল হক এবং নিহত রহিম সিকদারের বড় ভাই ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার। সমাবেশ শেষে লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল শহীদ মিনার থেকে খুরুশকুল রাস্তামাথা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার প্রদক্ষিণ করে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.