Wednesday, July 30, 2025

সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার শীর্ষে বাংলাদেশ

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৯,৭৩৫ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন, যার ফলে সাগরপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে এই পথে অন্তত ৭০,০০০ বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এই পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টাকারী অনেকেই লিবিয়ার ক্যাম্পে বন্দি হয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন এবং তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। তবুও এই বিপজ্জনক পথে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা থামছে না।

ব্র্যাক জানায়, এই অভিবাসীদের অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪০ এবং তারা মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ ১০-১২টি জেলার বাসিন্দা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতারিত বা নির্যাতিত ব্যক্তিরা দেশে ফিরে মামলা করলেও মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মানবপাচার আইনে ১,০৩৪টি নতুন মামলা হয়েছে। পুরোনো মামলাসহ মোট প্রায় ৪,৫০০ মামলা ঝুলে আছে, যার মধ্যে ৩,০০০টির বেশি বিচারাধীন এবং ১,০০০টির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আগামী বুধবার (৩০ জুলাই) আন্তর্জাতিক মানব পাচার বিরোধী দিবস পালিত হবে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ এই দিনটি ঘোষণা করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানবপাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার’। ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশিরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছেন। এই পথে অনেকে প্রাণ হারান, এবং লিবিয়ায় ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। তাদের ক্যাম্পে বন্দি করে টাকার জন্য পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “শ্রম অভিবাসনের নামে মানবপাচার একটি ভয়াবহ সমস্যা। পাচারকারীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিছিয়ে রয়েছে, এবং মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।” ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট দিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় শীর্ষে রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই পথে ৯২,৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এই পথে মাঝে মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ বছরের জানুয়ারিতে লিবিয়ায় ২৩ বাংলাদেশির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়, যারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবির শিকার হন।
ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, এই অভিবাসীদের অধিকাংশ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ও কুমিল্লার বাসিন্দা। ৬০% পরিবারকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়, কিন্তু ৮৯% কোনো কাজ পান না এবং ঝুঁকিতে পড়েন।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.