জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দিনের পর দিন খাদ্য ছাড়া কাটাচ্ছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "অপুষ্টি দ্রুত বাড়ছে। ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।"
এই সপ্তাহে গাজায় দুর্ভিক্ষের সতর্কতা আরও তীব্র হয়েছে। শুক্রবার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টির কারণে নয়জন মারা গেছে, যার ফলে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ১২২-এ পৌঁছেছে। গাজার সব সরবরাহ প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণকারী ইসরাইল দাবি করেছে, সাহায্য গ্রহণে কোনো বিধিনিষেধ নেই এবং অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে।
শুক্রবার এক ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিমান থেকে সাহায্য বিতরণের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে সাহায্য সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করেছিল যে এভাবে সাহায্য দেওয়া যথেষ্ট নয়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান এভাবে সাহায্য দিতে পারে। তবে জর্ডানের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, তারা এখনও ইসরাইলের অনুমতি পায়নি।
এই উদ্যোগ গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ইসরাইলের প্রতি সব বিধিনিষেধ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয়ের অবসানের দাবি জানিয়েছে, এবং বলেছে, ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। "বেসামরিক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বন্ধ করা অগ্রহণযোগ্য," বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে পরিমাণ মতভিন্নতা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সমাবেশে তিনি বলেন, ২৭ মে থেকে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার চেষ্টায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) যখন জাতিসঙ্ঘের পরিবর্তে খাদ্য বিতরণ শুরু করে, তখন থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঠিকাদার অ্যান্থনি আগুইলার বিবিসিকে বলেছেন, তিনি "নিঃসন্দেহে যুদ্ধাপরাধ" প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি দেখেছেন, আইডিএফ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে বেসামরিক নাগরিকদের উপর গোলাবারুদ, মর্টার ও ট্যাংক থেকে গুলি চালিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত এই সৈনিক বলেন, "আমার পুরো ক্যারিয়ারে এমন নিষ্ঠুরতা দেখিনি।"
জিএইচএফ দাবি করেছে, এই অভিযোগগুলো একজন ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারের, যাকে এক মাস আগে অসদাচরণের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল কাতার আলোচনা থেকে তাদের প্রতিনিধিদল প্রত্যাহার করায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা অনিশ্চিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, "হামাস সমঝোতা চায় না।" হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসির গাজা সংবাদদাতাকে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন যে আলোচনা পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি এবং ইসরাইলি দল আগামী সপ্তাহে দোহায় ফিরবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এরপর ইসরাইলের হামলায় গাজায় ৫৯ হাজার মানুষ মারা গেছে বলে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মার্চের শুরুতে ইসরাইল খাদ্য সহায়তার উপর অবরোধ আরোপ করে এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর আবার হামলা শুরু করে। অবরোধ কিছুটা শিথিল হলেও, বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞরা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গাজার বেশিরভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, তারা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ এমপি তাদের প্রধানমন্ত্রীকে একই পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ ধরনের পদক্ষেপ শিগগির নেওয়া হবে না, বরং এটি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অংশ হতে পারে।
Note For Readers:
The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules.
Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters.
The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.