Sunday, July 20, 2025

৮০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পেলেন চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে চীনের মর্যাদাপূর্ণ সরকারি বৃত্তি ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (সিজিএস)’ পেয়েছেন বাংলাদেশের ৮০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁরা চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে সম্পূর্ণ সরকারি সহায়তায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। এই বৃত্তি টিউশন ফি, আবাসন, মাসিক ভাতা, স্বাস্থ্যবিমা ও যাতায়াত খরচসহ সব ব্যয় বহন করে।

১৯৮১ সাল থেকে এই বৃত্তি কর্মসূচি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীনে উচ্চশিক্ষার দুয়ার খুলে রেখেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপের মাধ্যমে চীনে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন, যাঁদের অনেকেই এখন দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণা, প্রযুক্তি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

চীনের শিক্ষা-গবেষণার মান ও প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাম্পাস বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনমুখী উচ্চশিক্ষার আগ্রহ বাড়াচ্ছে। এই বৃত্তি শুধু একাডেমিক সুযোগই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে চীন এখন বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। শিক্ষাবিদদের মতে, চীনের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের এবং গবেষণাভিত্তিক। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও বৈচিত্র্যময় কোর্সের পাশাপাশি চীন সরকার প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান করছে। এর মধ্যে ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ’ সবচেয়ে সম্মানজনক। এটি চায়নিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিজিএস) পরিচালনা করে এবং চীনা দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে প্রদান করা হয়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী সিজিএস-এর জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে ৮০ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১৮ জন স্নাতক, ৪০ জন স্নাতকোত্তর, ২১ জন পিএইচডি এবং ১ জন সিনিয়র স্কলার হিসেবে মনোনীত। বৃত্তির সুবিধার মধ্যে রয়েছে টিউশন ফি, আবাসন, স্বাস্থ্যবিমা, যাতায়াত খরচ এবং মাসিক ভাতা—স্নাতক পর্যায়ে ২,৫০০ ইউয়ান, স্নাতকোত্তরে ৩,০০০ ইউয়ান এবং পিএইচডি পর্যায়ে ৩,৫০০ ইউয়ান। বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা মি. সান বলেন, এই বৃত্তি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব গভীর করেছে। তিনি আশাবাদী যে, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে ইতিবাচক অবদান রাখবেন। আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত ডিসেম্বরে শুরু হয়, ফেব্রুয়ারিতে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হয়। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সিজিএসের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয়। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পিকিং ইউনিভার্সিটি, সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি, সাংহাই জিয়াওটং ইউনিভার্সিটি, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও চীনা ভাষা শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করবেন। পিকিং ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই সুযোগ আমার জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।” বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জান্নাতুল আরিফ বলেন, “এই বৃত্তি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আশীর্বাদ। এটি শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করবে।” বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে ভর্তির অনুমতিপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়েছেন এবং ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চীনের উদ্দেশে রওনা হবেন।
এ ছাড়া, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীনের বিভিন্ন প্রাদেশিক, পৌর, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল শিক্ষা বৃত্তি রয়েছে, যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনমুখী উচ্চশিক্ষার আগ্রহ আরও বাড়াচ্ছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.