আহমেদাবাদ, ১২ জুন ২০২৫ – ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই-১৭১, একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে বিমানের যাত্রী এবং মেঘানি নগর এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন। এই বিপর্যয়ের মধ্যে একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হলেন ৪০ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্ব কুমার রমেশ।
১১-এ নম্বর সিটে বসা রমেশ হাসপাতাল থেকে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেল। আমি যখন উঠে দাঁড়ালাম, তখন আমার চারপাশে শুধু লাশ। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি উঠে দৌড়ে গেলাম। আমার চারপাশে বিমানের টুকরো ছিল।” সাদা টি-শার্ট এবং গাঢ় রঙের প্যান্ট পরা রমেশের শরীরে কোনো পোড়া চিহ্ন ছিল না, তবে তার বুকে, চোখে এবং পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভাইরাল ভিডিওতে তাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে।
বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, যার মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। দুপুর ১:৩৮ মিনিটে উড্ডয়নের পর বিমানটি ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল, কিন্তু হঠাৎ নামতে শুরু করে। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, উড্ডয়নের এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে বিমানের সংকেত হারিয়ে যায়। পাইলট ‘মে ডে’ সংকেত পাঠানোর পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, এবং বিমানটি একটি ভবনে আছড়ে পড়ে বিশাল বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে।
লন্ডনে ২০ বছর ধরে বসবাসকারী রমেশ তার ভাই অজয় কুমার রমেশের (৪৫) সঙ্গে দিউ-তে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। অজয় বিমানের অন্য সারিতে বসেছিলেন, এবং রমেশ বলেন, “আমি তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। দয়া করে তাকে খুঁজে দিন।” কর্তৃপক্ষ এখনও অজয়ের অবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি।
দুর্ঘটনাস্থলটি বিজে মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের হোস্টেলের কাছে, যেখানে কমপক্ষে ৫০ জন মেডিকেল ছাত্র আহত এবং পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও এই ফ্লাইটে ছিলেন এবং তিনি মারা গেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনাকে “হৃদয়বিদারক” বলে বর্ণনা করেছেন, এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এটিকে “বিধ্বংসী” বলেছেন। এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গ্রুপ প্রতিটি ভুক্তভোগীর পরিবারকে ১ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহনের ঘোষণা দিয়েছে। বোয়িং জানিয়েছে, তারা তদন্তে সহায়তার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে। ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের সহায়তায়।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য দিল্লি ও মুম্বাই থেকে দুটি ত্রাণ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ এখনও তদন্তাধীন, বিশেষজ্ঞরা বিমানের উইং ফ্ল্যাপ বা আকস্মিক শক্তি হ্রাসের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন।
এ.আই/এম.আর