ফেনী, ০৭ জুন, ২০২৫ : ফেনীর পরশুরামে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে এবারও বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। চামড়ার দাম এতটাই কম যে, তা ‘পানির দরে’ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গরুর চামড়ার সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকায়। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও দুস্থরা বঞ্চিত হচ্ছেন, যারা এই বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।
পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য সেলিম সরকার জানান, উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ছোট গরুর চামড়ার দাম পড়ছে মাত্র ১০০ টাকা। চামড়ার বাজারে এই ধসের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সত্যনগর গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের একটি গরু দিয়ে কোরবানি করেছেন, কিন্তু তার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০০ টাকায়। একইভাবে, বক্সমাহমুদ এলাকার সামছুল আলম জানান, গত বছরের মতো এবারও তাদের এলাকায় চামড়া কিনতে কেউ না আসায় স্থানীয়রা তা নিকটবর্তী মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন। এলাকায় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে চামড়া বিক্রির খবর শোনা গেছে।
চিথলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকায় বিভিন্ন স্থানে চামড়া সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি নিজে ৮১ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া ২৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
পরশুরামের অন্যতম চামড়া ব্যবসায়ী তহিদুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ৪০০টি চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কিনেছেন। তবে, লবণ যুক্ত করতে শ্রমিক, পরিবহন এবং অন্যান্য খরচের কারণে চামড়ার ক্রয়মূল্য বেড়ে যায়, যা লাভের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
সরকার এ বছর কোরবানির মৌসুমে ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করেছে ১,১৫০ টাকা। বড় আকারের চামড়ার দাম আরও বেশি হওয়ার কথা। তবে, কোরবানির পরপরই সাধারণত কাঁচা (লবণ ছাড়া) চামড়া বিক্রি হয়, যার দাম নির্ধারিত থাকে না এবং ক্রেতা-বিক্রেতার দর-কষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সত্যনগরের বাসিন্দা নুরুল আলম জানান, তিনি তার কোরবানির গরুর চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছরই চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। অনেক সময় ন্যায্য দাম না পেয়ে চামড়া এতিমখানায় দান করতে হয়।
৪-বিজিবির (ফেনী) বেটালিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, কোরবানির চামড়া ভারতে পাচার রোধে বিজিবি কঠোর নজরদারি জারি রেখেছে। সীমান্তে নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
চামড়ার দামে ধসের এই প্রবণতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ন্যায্য দাম ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য জোরালো দাবি উঠেছে।
এ.আই/এম.আর