Saturday, June 14, 2025

বন্ধু থেকে চরম শত্রু: ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের রূপান্তর

একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র থাকলেও আজ ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের কট্টর শত্রু হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এখন তীব্র বৈরিতা ও পারস্পরিক অবিশ্বাসে ভরা। ইতিহাস বলছে, এক সময় এই দুই দেশের মধ্যে ছিল গভীর কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সামরিক সহযোগিতা। কিন্তু ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এই সম্পর্ক চরম শত্রুতায় রূপান্তরিত হয়েছে।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫০ সালে তুরস্কের পর দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে ইরান এটিকে স্বীকৃতি দেয়। তখন ইরানে শাসন করছিলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। তার শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয় দেশ একে অপরের রাজধানীতে দূতাবাস স্থাপন করে এবং নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সফর ও সহযোগিতা চলতে থাকে। ইরান তখন ইসরায়েলকে নিয়মিত তেল সরবরাহ করত। ১৯৫৭ সালে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাভাক’ প্রতিষ্ঠিত হলে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এতে সহায়তা করে। মূলত মার্কিন সমর্থন নিশ্চিত করতেই ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল।
কিন্তু ইরানের জনগণের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ছিল। ধর্মীয় নেতা ও বামপন্থিরা ইসরায়েলকে ‘অধিকারহীন দখলদার রাষ্ট্র’ হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের অবস্থান ছিল কঠোরভাবে ইসরায়েলবিরোধী। এই জনবিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে। আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে নতুন সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। তেহরানে ইসরায়েলের দূতাবাসকে ফিলিস্তিন দূতাবাসে রূপান্তর করা হয় এবং ইরান রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকে যায়। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। জবাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার অভিযোগ ওঠে। আজকের দিনে এসে দুই দেশের বৈরিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যুদ্ধ এখন একটি বাস্তব সম্ভাবনা।
বন্ধুত্ব থেকে চরম শত্রুতায় রূপান্তরের এই যাত্রা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে একটি দৃষ্টান্তমূলক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত

এ.আই/এম.আর

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.