স্পোর্টস ডেস্ক, ০১ জুন ২০২৫ : অবশেষে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ইউরোপীয় ফুটবলের শীর্ষে নিজেদের নাম লিখে ফেলল। মিউনিখের অলিয়্যাঞ্জ অ্যারেনায় ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলের বিধ্বংসী ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে নিয়েছে লুইস এনরিকের তরুণ ও ক্ষুধার্ত দল। দেড় দশকের প্রতীক্ষা, শত কোটি ইউরোর বিনিয়োগ, এবং নেইমার-মেসি-এমবাপ্পের ছায়া পেরিয়ে পিএসজি ইতিহাস সৃষ্টি করল।
ম্যাচের ১১ মিনিটেই শুরু হয় গোলের উৎসব। প্রথম গোলটি আসে ইন্টারের সাবেক খেলোয়াড় আচরাফ হাকিমির পা থেকে। তরুণ তারকা ওয়ারেন জায়ের-এমেরির কাছে বল পৌঁছায় পাসের জালে, আর তিনি নিখুঁতভাবে বল বাড়ান হাকিমির দিকে। গোললাইনের কাছ থেকে হাকিমির নির্ভুল শট ইন্টারের প্রতিরক্ষা ভেদ করে। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে এই গোল যেন পিএসজির আত্মবিশ্বাসের প্রথম স্ফুলিঙ্গ।
২০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ১৯ বছরের জায়ের-এমেরি। ওসমান ডেম্বেলের শক্তিশালী পাসে তার হাফ-ভলি শট ডিফেন্ডার ডি’মারকোর পায়ে লেগে দিক পাল্টায় এবং ইন্টারের গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে ঠকিয়ে যায়। এটিকে ভাগ্য বললেও, ইউরোপ জয়ের পথে এমন ভাগ্যের ছোঁয়া লাগেই।
বিরতির পর ইন্টার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও, এনরিকের ছক-ভাঙা কৌশলের সামনে তারা ছিল অসহায়। ৬৩ মিনিটে জায়ের-এমেরি আবারও আলো ছড়ান, আর ৭৩ মিনিটে জর্জিয়ান তারকা খভিচা কভারাত্সখেলিয়া দুর্দান্ত গোল করে ইন্টারকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করেন। শেষ মুহূর্তে মঞ্চে এলেন তরুণ সেনি মায়ুলু—তার প্রথম স্পর্শেই বল জালে জড়ান। স্কোরবোর্ড তখন বলছে: পিএসজি ৫, ইন্টার ০।
২০১৫ সালে বার্সেলোনার সঙ্গে ট্রেবল জয়ের এক দশক পর, লুইস এনরিকে আবারও ফুটবলের শীর্ষে পৌঁছালেন—এবার ভিন্ন পথে। এই দলে নেই মেসি, নেইমার বা এমবাপ্পে নেই। এ জয় নতুন প্রজন্মের—ডোনারুম্মার দৃঢ়তা, ভিটিনহা-নেভেস-রুইজের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ, আর ডেম্বেলে-জায়ের-এমেরি-কভারাত্সখেলিয়ার বিদ্যুৎ গতির আক্রমণের। পিএসজি শুধু জিতল না, তারা শাসনের ঘোষণা দিল।
মজার বিষয়, অলিয়্যাঞ্জ অ্যারেনায় এর আগে যত ফাইনাল হয়েছে, তাতে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়নরাই জিতেছে—১৯৭৯-এ নটিংহাম ফরেস্ট, ১৯৯৩-এ মার্সেই, ২০১২-এ চেলসি। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো পিএসজি।
ইউরোপের নতুন রাজা এখন প্যারিস। যাদের নিয়ে কটাক্ষ ছিল ‘ইতিহাস নেই’, তারা আজ নিজেরাই ইতিহাস লিখল। এই রাত প্যারিসের, এই ট্রফি এনরিকের, এই উদযাপন ফুটবলের নতুন দিগন্তের।
এ.আই/এম.আর