Saturday, May 24, 2025

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: ভারতীয় আধিপত্যের প্রতীক, জাতীয় ঐক্যের আহ্বান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ছায়া সংসদে
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ (বাঁয়ে) ও আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ২১:২৫
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভারতের আধিপত্যের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করে এটি বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “রামপাল শুধু পরিবেশের জন্য হুমকি নয়, এটি আমাদের অর্থনৈতিক ও জাতীয় স্বাধীনতার ওপর ভারতীয় প্রভাবের প্রতীক। আমাদের জাতীয় ঐক্য জোরদার করতে এই প্রকল্প বন্ধ করে দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।”
শনিবার (২৪ মে ২০২৫) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক প্রাণবন্ত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই দাবি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী, যিনি জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন।
রামপালে ভারতীয় প্রভাব ও পরিবেশগত হুমকি
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নির্মিত, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। সুন্দরবনের কাছে এর অবস্থান পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।” তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় প্রভাব জোরদার হওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “এটি বন্ধ করলে সাময়িক ক্ষতি হতে পারে, কিন্তু দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা পূরণ করা সম্ভব।”
জাতীয় ঐক্য জোরদারের আহ্বান
আনু মুহাম্মদ জ্বালানি খাতে ভারতীয় প্রভাব কমানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, “রামপাল, মাতারবাড়ী ও রূপপুরের মতো প্রকল্প অর্থনীতির ওপর বোঝা। এগুলো জাতীয় স্বাধীনতাকে দুর্বল করছে। আমাদের জাতীয় ঐক্য জোরদার করতে এসব চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।” তিনি দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ ও তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান। তিনি সুন্দরবনের পরিবেশগত ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেন, “এই প্রকল্পগুলো জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে হতাশা
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন বাতিল করেছে, কিন্তু বিগত সরকারের প্রকল্পগুলোর বৈধতা দিয়ে জনগণের প্রত্যাশায় ধাক্কা দিয়েছে।” তিনি ভারতীয় প্রভাব কমাতে এবং প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানান।
আয়োজকের সমালোচনা ও দুর্নীতির অভিযোগ
অনুষ্ঠানে সভাপতি হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, “বিগত শাসনামলে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে জ্বালানি খাতে লুটপাট হয়েছে। ভারতীয় প্রভাবের ছায়ায় রামপালের মতো প্রকল্প জাতীয় স্বার্থের ওপর আঘাত হেনেছে।” তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি জানান। এনার্জি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অযোগ্য বিদেশি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্প পেয়েছে, যা খরচ বাড়িয়েছে।
ছায়া সংসদ: তরুণদের প্রাণবন্ত বিতর্ক
‘সঠিক পরিকল্পনার অভাবই জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনের প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকেরা বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে বিজয়ী হন। বিচারক প্যানেলে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক রিশান নসরুল্লাহ ও মো. মহিউদ্দিন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারীদের ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।
প্রেক্ষাপট ও তথ্যসূত্র
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে বিদেশি প্রভাব ও পরিবেশ ধ্বংসকারী প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার। রামপালের বিরুদ্ধে ২০১০ সাল থেকে তিনি আন্দোলন করে আসছেন, যা পরিবেশবাদীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.