ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫: রাজধানী ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মিলে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বরাদ্দ রাখে ১১০ কোটি টাকা, আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বরাদ্দ রাখে ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে এত বিপুল অর্থ ব্যয় করেও মশার উপদ্রব কমানো যায়নি। নগরবাসী মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ, আর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও মশার উৎপাত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৪৫২ জন, এবং মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এদের মধ্যে ৫৯.১% পুরুষ এবং ৪০.৯% নারী। ঢাকার ১৪৬৩.৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস করেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মশার সংখ্যাও বাড়ছে। নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম লোক দেখানো, যার ফলে মশার উপদ্রব কমার পরিবর্তে বেড়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থ উদ্যোগ
মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন—ড্রোন ব্যবহার করে মশার প্রজননস্থল শনাক্তকরণ, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্য সংগ্রহ, খাল-নালায় ব্যাঙ ও হাঁস ছাড়া, এবং জনসচেতনতামূলক জিঙ্গেল প্রচার। কিন্তু এসব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। গত ১০ বছরে মশা নিধনে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। উত্তর সিটিতে ৫৬০ কোটি এবং দক্ষিণ সিটিতে ২৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এই সময়ে।
নগরবাসীর ক্ষোভ
বনশ্রীর শারমিন আক্তার বলেন, “মশার উপদ্রবের কারণে দিনেও মশারি ব্যবহার করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমে কোনো ফল হচ্ছে না।” বাড্ডার আলমগীর হোসেন বলেন, “মশার ওষুধ ছিটানোর লোক দেখা যায় না। ডেঙ্গুর ভয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।” যাত্রাবাড়ীর সবুজ আহমেদ অভিযোগ করেন, “মশার ওষুধ ছিটানোর কথা প্রতিদিন দুইবেলা, কিন্তু সপ্তাহে দু-একবারও দেখা যায় না।”
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
ডিএসসিসি’র প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “আমরা নিয়মিত মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছি। নগরবাসীকেও জমে থাকা পানি ফেলে সচেতন হতে হবে।” ডিএনসিসি’র প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, “মশার ওষুধ ছিটানোর তদারকির জন্য সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।” কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, “অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্লাস্টিকের ব্যবহার মশার প্রজনন বাড়াচ্ছে। বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা জরুরি।”
বিপুল অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম ব্যর্থ হচ্ছে। জনসচেতনতার অভাব এবং অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান কঠিন।
এ.আই/এম.আর