বরিশাল, ১ মে ২০২৫ : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে। বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরের সদর রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হলে কেউ বাঁচবে না। তাই গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থেকে একযোগে কাজ করতে হবে।
শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, দেশের ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমিকদের বঞ্চিত, নির্যাতিত, ও অসহায় করে রেখেছে। তিনি অভিযোগ করেন, শ্রমিকদের সমাবেশ, সংগঠিত হওয়া, বা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩-এর মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি, ছাঁটাই বেড়েছে, এবং কাজের পরিবেশ নাজুক। জুটমিল, চিনিকল, ও গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকরা প্রাণ দিচ্ছে। শেখ হাসিনার আমলে পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও র্যাব গুলি চালিয়েছে, যাতে শ্রমিক আঞ্জুমান আরা খাতুন, জালাল উদ্দিন, ও রাসেল নিহত হয়। তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে শতাধিক শ্রমিক শহিদ হয়।
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে কল-কারখানা বন্ধ হচ্ছে, হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। শ্রমিকদের পরিবার খাদ্য ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তিনি আগের সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতি, যেমন আইটসোর্সিং ও জুটমিল-চিনিকল বন্ধের সমালোচনা করেন।
রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নামে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা লুটপাট করা হতো, যার ফলে শ্রমিকরা সম্পদ বিক্রি করেও চাকরি পায়নি। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে মিল-কারখানা বন্ধ না করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে সচল রাখার আহ্বান জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শুধু ছাঁটাই ও বেকারত্ব বাড়ালে জনগণের আস্থা থাকবে না। তিনি মিয়ানমারের রাখাইনে মানবতার করিডোর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেন, দেশের মানুষের চাহিদা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে এমন পদক্ষেপ দুঃখজনক।
রিজভী শেখ হাসিনাকে উসামা বিন লাদেনের “খালাতো বোন” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে লুকিয়ে ভিডিও বার্তায় হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, এবং তিনি ২২৭টি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন, যা ফরেনসিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত।
মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অন্যান্য বক্তারা ছিলেন কুদ্দুসুর রহমান, হাসান মামুন, আবুল হোসেন খান, মনিরুজ্জামান ফারুক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ.আই/এম.আর