টেকনাফ, ২৩ মে ২০২৫ : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদ ও এর সংলগ্ন এলাকা গত সাত মাসে আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এই সময়ে অন্তত ২২০ জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে।
শুধুমাত্র ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই ১৫১ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় অনেককে ফেরত আনা সম্ভব হলেও বেশ কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১২ মে নাফ নদে আরাকান আর্মির হামলায় দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হন এবং তিনজন অপহৃত হন। এর আগে ৮ এপ্রিল চারটি ট্রলারসহ ২৩ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় এই গোষ্ঠী। অপহৃতদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এলেও তাদের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. আইয়ুব জানান, গত ৬ এপ্রিল সেন্টমার্টিনের কাছে বঙ্গোপসাগরে তাদের ট্রলার অস্ত্রের মুখে আটক করা হয়। ট্রলারে থাকা ৯ জেলের হাত-চোখ বাঁধা হয় এবং তাদের মিয়ানমারের মংডুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের হাজতখানার মতো পরিবেশে রাখা হয়, যেখানে ২০০-২৫০ জন বন্দি ছিলেন। দুই বেলা কলাপাতায় কাঁঠালের এঁচোড়সহ ভাত দেওয়া হতো, তবে লবণ বা মসলা চাইলে মারধর করা হতো। আইয়ুব দাবি করেন, আরাকান আর্মি বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সরবরাহের বিনিময়ে বন্দিদের মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল।
আরাকান আর্মির তৎপরতা বৃদ্ধির পেছনে রাখাইন রাজ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা একটি বড় কারণ। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা রাখাইনের ৯০ শতাংশ এলাকা দখল করেছে এবং নাফ নদে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের কারণে জেলেরা প্রায়ই তাদের হাতে ধরা পড়ছেন। বিজিবির রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জলসীমা অতিক্রম করলে আরাকান আর্মি জেলেদের আটক করে। বিজিবি ইনফরমাল যোগাযোগের মাধ্যমে অনেককে ফিরিয়ে এনেছে, তবে খাদ্য সরবরাহের কোনো সুযোগ নেই।
নাফ নদে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তবে, আরাকান আর্মির তৎপরতায় জেলেদের জীবন ঝুঁকির মুখে।
এ.আই/এম.আর