ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ – বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার (২৬ এপ্রিল) রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর ক্যাথলিক চার্চের জ্যেষ্ঠ নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাদের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন। রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
আলোচনায় পোপ ফ্রান্সিসের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের স্বার্থ রক্ষার আজীবন প্রতিশ্রুতি, দারিদ্র্য দূরীকরণে তার প্রচেষ্টা এবং যুদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি স্মরণ করা হয়। দুই কার্ডিনাল অধ্যাপক ইউনূসের কাজের গভীর প্রশংসা করে তাকে প্রয়াত পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেন এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তার দীর্ঘ সাহচর্যের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “তিনি ছিলেন একজন আশ্চর্যজনক মানুষ।” তিনি পোপের সঙ্গে তার পোপত্ব গ্রহণের সময় বহুবার সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ভ্যাটিকান ব্যাংকের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে লেখা একটি সমালোচনামূলক চিঠির কথা তুলে ধরেন, যা ভ্যাটিকানের সরকারি সংবাদপত্র ল’অসারভাতোরে রোমানোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি লিখেছিলাম কীভাবে ভ্যাটিকানের ব্যাংককে দরিদ্রদের প্রতি আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করতে সংস্কার করা উচিত। তবুও পোপ পুরো চিঠিটি প্রকাশ করেছিলেন।”
অধ্যাপক ইউনূস বর্ণনা করেন, পোপ ফ্রান্সিস তাকে ভ্যাটিকানের ব্যাংকিং পদ্ধতি সংস্কার এবং চার্চের দরিদ্র-বান্ধব উদ্যোগ সম্প্রসারণের জন্য বেশ কয়েকটি কমিটির সভাপতিত্বের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। গত নভেম্বরে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিস-ইউনূস থ্রি জিরো ক্লাব চালু হয়, যার লক্ষ্য শৌন্য বেকারত্ব, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য নেট কার্বন নির্গমনের বিশ্ব গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, “আমি একজন মুসলিম। তবুও পোপ ফ্রান্সিস কখনও ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তির সঙ্গে তার নাম ব্যবহার করার বিষয়ে আপত্তি করেননি।” তিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর সাধু সেন্ট ফ্রান্সিস অফ অ্যাসিসির মশাল দিয়ে সম্মানিত হওয়ার কথাও স্মরণ করেন।
কার্ডিনালরা জানান, তারা কলেজ অফ কার্ডিনালসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং আগামী সপ্তাহে পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য সভায় মিলিত হবেন। উভয়কেই চার্চের শীর্ষ পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের অফিসে হলি সি-এর প্রাক্তন স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরকারী তোমাসি ইউক্রেন ও গাজার সংঘাত বন্ধে পোপ ফ্রান্সিসের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।” তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
অধ্যাপক ইউনূস ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করতে এই দেশটিকে অনুকরণ করছে।
কার্ডিনাল কুভাকাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য ভ্যাটিকানের প্রিফেক্ট কার্ডিনাল কুভাকাদ রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। ভারতের কেরালা থেকে আগত কুভাকাদ জানান, বাংলাদেশের ক্যাথলিক চার্চ আগামী সেপ্টেম্বরে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আয়োজন করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন।
বৈঠকে সরকারের এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ, ভ্যাটিকানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আরিফুল ইসলাম এবং ইতালিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রোকিবুল হক উপস্থিত ছিলেন।
এ.আই/এম.আর